শেখ রাজীব হাসান,গাজীপুরঃ
দেশব্যাপী স্বনামধন্য গাজীপুরের টঙ্গী প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দৈনিক প্রথমআলো পত্রিকার জোষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে নিপীড়ন ও গ্রেফতারে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২০ই মে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ঘটিকার সময় টঙ্গী প্রেসক্লাবের হলরুমে প্রতিবাদ সভা শেষে ঢাকা-ময়মনসিংহ সহাসড়কে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সাংবাদিক রোজিনার দ্রুত ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান সাংবাদিকরা। মানববন্ধনে অংশ নিয়েছে টঙ্গী প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ হায়দার সরকার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্য ও সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ন সম্পাদক পুলক ঘটক, সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান, সৈয়দ আতিক, সিনিয়র সাংবাদিক শেখ শহীদুল্লাহ, মহিউদ্দিন সরকার, নুরুল ইসলাম, হাসান মামুন, মাকসুদ আহমেদ রবিন, মাসুদ সরকার, শাহাজাহান শোভন, প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদক মোঃ আল-আমিন, আবু সালেহ মুসা, শেখ রাজীব হাসান, বশির আলম মাল, আল-আমিন হোসেন, হুমায়ুন কবির বাপ্পী, আরিফ চৌধুরী, মাহাবুব জিলানী, মনিরুল ইসলাম রাজু, সংগঠক ও সাইদুর রহমানসহ একাধীক প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ।
জানা যায়, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গত সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। শাহাবাগ থানার পরিদর্শক আরিফুর রহমান সরদার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বেলা ১১টার পরে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. জসিম রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার তার জামিন শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এসময় বক্তারা বলেন,প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরুষ্কার প্রাপ্ত রোজিনা ইসলামকে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী কতৃক হেনস্তা-নির্যাতন ও মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি রোজিনা ইসলামকে নির্যাতনে জড়িত কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার সহ নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানাচ্ছি। বর্তমান সময়ে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা হেনস্তার শিকার হয়েছেন,দীর্ঘ সময় তাঁকে আটক রাখা হয়, শারীরিক মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়। এরপর মামলা দিয়ে তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করলেও এ মুহূর্তে রোজিনা ইসলাম কারান্তরীণ আছেন। আমি মনে করি এমন কর্মকাণ্ড বর্তমান সময়ে স্বাধীন দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রের দুর্নীতিবিরোধী নীতি ও মূল্যবোধের ওপর প্রচণ্ড এক আঘাত হেনেছে। স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এ এক অপ্রত্যাশিত অশনিসংকেত। আমি ন্যক্কারজনক এই ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের’ অধীনে একটি মামলা দিয়ে রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আমরা অনেকেই জানি পুরোনো প্রণীত এই আইন ব্রিটিশ শাসনকে পাকাপোক্ত করার কাজে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ এসে এ ধরনের ঔপনিবেশিক আইন ব্যবহার করে সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনা স্বাধীন গণমাধ্যমের মূলে চরম সাংঘর্ষিক কুঠারঘাত। সিক্রেটস অ্যাক্টের প্রয়োগ প্রকারান্তরে দেশে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে বলে আমি মনে করি।আমি এই আইনের বাতিল চাই। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জবাবদিহির ঊর্ধ্বে কেউই নয়, বিশেষ করে দুর্নীতিগ্রস্ত দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে জনসম্পদ হয় ক্ষতিগ্রস্ত। সারা পৃথিবীজুড়েই সাংবাদিকেরা সংবাদ সংগ্রহের জন্য অনেক কৌশলীভাবে নানা পথ অবলম্বন করে থাকেন, তাই বলে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, আটকে রাখা থেকে গ্রেপ্তার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রোজিনা একজন স্বনামধন্য সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি তাঁর সাংবাদিকতার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে পুরস্কৃত, তাঁর সঙ্গে আজ যা ঘটল, তা অবাধ তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হলো। দেশের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সাংবাদিকতায় সাংবাদিকরা দেশ ও দশের উন্নয়নের জন্য অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। সরকার বাহাদুরকে আমরা জানাতে চাই আমরা দেশ ও দশের উন্নয়নের সহযোগী সাংঘর্ষিক কোন চিন্তা চেতনা লালন করি না। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড কে গতিশীল করে তোলার জন্য আয়নার মতো সারা দেশটাকে আমরা প্রতিনিয়ত তুলে ধরার চেষ্টা করি। আমরা সরকারের আন্তরিক মনোযোগ কামনা করি। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা চাই। আজকের মানববন্ধন প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত সকল সাংবাদিক, শুভাকাঙ্ক্ষী শুভানুধ্যায়ী, প্রশাসন সহ সকলকে জানাই টঙ্গী প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ, ও কৃতজ্ঞতা। এ ভাবেই সামনের দিন গুলিতে পাশে থাকবেন এ প্রত্যাশা করছি।